কূটনৈতিক প্রতিবেদক: রাখাইনে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর বর্বর গণহত্যা ও নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আংশিক ফেরত নিতে দেশটি যে প্রস্তাব দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমনের কৌশল হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। কারণ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চাপ অব্যাহত না থাকলে মিয়ানমার মূল সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী নাও হতে পারে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলায়তনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে এ আশংকার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর বর্বর গণহত্যা ও নির্যাতনে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পালিয়ে এসেছে সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। সেখানে গণহত্যা এখনও অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশমূখী রোহিঙ্গা শ্রোত থামছে না। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি গত মাসে পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে বলেন, ১৯৯২ সালে করা প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় যাচাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে তার দেশ। এরপর এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকেও একই প্রস্তাব তুলে ধরেন। কিন্তু মিয়ানমারের এই প্রস্তাবে কোন আন্তরিকতা দেখছে না বাংলাদেশ। রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন বাঙালি সন্ত্রাসী ও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার নিজস্ব যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সীমিত করার এবং নানা অজুহাতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে বিলম্বিত করতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে যৌথভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যাতে সু চির এনএলডি সরকার রাখাইনে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও জীবন যাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক নীতি বাস্তবায়ন করে এবং সামরিক বাহিনী নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, প্রথম ক্ষেত্রে মূল সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরকিত্বসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনরে সুযোগ করে দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারি ও সহযোগিতা ছাড়া মিয়ানমারকে দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গা প্রত্যর্পনে আগ্রহী রাখা কঠিন হবে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বহুপক্ষীয়, আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।