ঢাকা: বাংলাদেশে বেকারত্বের হার নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্যকে জঘন্য মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান। তিনি বলেছেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ বেকার, যা ইউরোপের অনেক দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম। এটা মিথ্যা, জঘন্য মিথ্যা, তার চেয়েও মিথ্যা। বাংলাদেশে আজকে সবচেয়ে বড় সমস্যা দারিদ্র্য নয়, বেকারত্ব।’
শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘প্রান্তজনের সামাজিক সুরক্ষা : অর্জন ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এই গোলটেবিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব ড. এএসএম আতীকুর রহমান, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ডায়লগ-এর মহাসচিব ড. এস এম মোর্শেদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন এবং ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান।
ড. আকবর আলী খান বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের মহামন্দার কাল বিরাজ করছে। দিনে দিনে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। নানা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরও এখনো ভিক্ষাবৃত্তি বাড়ছে। লাখ লাখ লোক বস্তিতে বসবাস করছে, যারা সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাইরে রয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে আনা এখনো সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমাদের দারিদ্র বিমোচন নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে আকবর আলী খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন আয়ের দেশ। তবে সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেপাল ছাড়া সবাই এ ক্যাটাগরিতে পড়েছে। তাই এটা নিয়ে এত বেশি উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে ২০৮ দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থানে বাংলাদেশ ১৪০তম। এ অবস্থান ৪০তম হলে সেটা সন্তোষজনক হবে। মূল প্রবন্ধে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, টাকার অংকে এ বছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৩০০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বেশি হলেও বাজেটে খাতভিত্তিক বিবেচনায় এ বরাদ্দ বাড়েনি। আর স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতের উপকারভোগীর তালিকা তৈরিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রভাব থাকে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ কতটুকু স্বচ্ছতার সাথে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণ করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের মধ্যে প্রকৃত সুবিধাভোগী বহির্ভূত ব্যক্তিরাও এ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ এখনো অসংখ্য দুস্থ, দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ জনগণ এ সুবিধার বাইরে রয়েছে। তাই এ কর্মসূচিকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রেখে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা না হলে প্রান্তজনের সুরক্ষা সম্ভব নয়। সরকারের যে কোন কল্যাণমুখী কর্মসূচির সফলতার জন্য সুশাসন জরুরি।