বিসিবি পরিচালক নাদেলের কিছুটা সময় ক্ষান্তি দিন

0
785
blank
blank

মুহিত চৌধুরী: শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক। গত ২৩ মে তার শরীরে করোনাভাইরাস (পজিটিভ) শনাক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা গ্রহন করেন। তিনি নিজে ছিলেন একজন করোনা যোদ্ধা, তাঁর ছিলো দৃঢ় মনোবল এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা। দেশবাসীর দোয়ার বরকতে এবং আল্লাহর রহমতে নাদেল করোনাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ৩ জুন বুধবার তাঁর দ্বিতীয় টেষ্টে করোনা রির্পোট নেগেটিভ আসে।

সিলেটে করোনা পরিস্থিতি শুরু হবার সাথে সাথে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। বিতরণ করেন খাদ্যসহায়তা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করেন পিপিই এবং কেএন ৯৫ মাস্ক। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি ছিলো তা হলো সিলেটে করোনাভাইরাস সংকট জনিত পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা সমৃদ্ধ ‘করোনা সাপোর্ট সিলেট’ নামে একটি টিম গঠন করা।  এই টিম চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি করোনা রোগীর এম্বুলেন্স এরও ব্যবস্থা করে।

সুস্থ হবার পরই আবার তিনি মাঠে নেমেছেন, শহীদ শামসুদ্দীন আহমদ হাসপাতালে ভেন্টিলেটর বিতরণে অংশ নিচ্ছেন, বিনা চিকিৎসায় মৃতুবরণ করার ঘটনায় সিলেট চেম্বারে আয়োজিত সভায় যোগ দিচ্ছেন, প্রিয় নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামারানকে এয়ার এম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিতে সিলেট ওসমানী এয়ারপোর্টে গিয়েছেন। নাদেলের সুস্থ হয়ে ওঠার পরপর এমন কর্মতৎপরতায় উদ্বিগ্ন তাঁর স্বজন এবং শুভাকাঙ্খীরা। তারা বলছেন কমপক্ষে নাদেলকে ছয় মাস এইসব কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকতে হবে।

জাতীয় রাজনীতিতে একসময় নেতৃত্ব ছিলো সিলেটের হাতে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত-এর মৃত্যুর পর জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের প্রতিনিধিত্ব শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

এমনি এক পরিস্থিতিতে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। আর এর মাধ্যমে সিলেটের পরিচ্ছন্ন ও তরুণ এই রজিনীতিবিদ নিজেকে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে প্রমান করলেন।
তিনি অবশ্য রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। এ পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পোহাতে হয়েছে। একজন লড়াকো ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় কারাবরণও করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহানারা ইমামের নামে হলের নামকরণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির পাঁয়তারা প্রতিহত করার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন তিনি।

blankস্কুলজীবনেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হন শফিউল আলম নাদেল। ১৯৮৬ সালে তিনি নিজের স্কুল সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরবর্তীতে সিলেট সরকারি কলেজ এবং এমসি কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন তিনি। পরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য হন নাদেল।১৯৮৭ সালে তিনি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে ১৯৯৭ সালে হন সভাপতি।ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়ান নাদেল। ছাত্রলীগের জেলা শাখায় রাজনীতি করলেও আওয়ামী লীগের মহানগর শাখায় যুক্ত হন তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগে প্রথমে শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হন নাদেল।

সিলেটের মানুষ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে আরো অনেক বড় পরিসরে দেখতে চান। পূর্বসূরীদের মতো জাতীয় পর্যায়ে তিনি সিলেটের প্রতিনিদ্ধিত্ব করবেন। আর সে জন্য বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাকে সর্তক পদচারণ করতে হবে।

বিবিসির এক রির্পোটে বলা হয়েছে …..’সুস্থ হবার পরেও অনেকে আবার কোভিড নাইনটিনে সংক্রমিত হচ্ছেন। ভাইরাস শরীরের ভেতরে ‘লুকিয়ে থাকতে’ পারে। এমন কিছু ভাইরাস আছে যা মানবদেহের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। এনজুয়ানেসের কথায়, দেহের কিছু প্রত্যঙ্গের এমন কিছু টিস্যু যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে রয়ে যায় – সেখানে ভাইরাস বসে থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস যে এত তাড়াতাড়ি তার লুকানো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে আবার আঘাত হানতে পারে – এটাই বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে।..

পরিশেষে বলবো, নাদেল আপনার জন্য না হলেও আমাদের জন্য, সিলেটবাসীর জন্য, প্রিয় বাংলাদেশের জন্য আপনাকে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে হবে তাই কিছুটা সময় ক্ষান্তি দিন।

লেখক: সম্পাদক দৈনিক সিলেট, সভাপতি সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব