সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মুন্নীর প্রধান খুনী ইয়াহিয়াকে সিলেট থেকে গ্রেফতার

0
485
blank

কেএম শহীদুল, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এস এস সি পরীক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার মুন্নীর খুনের মামলার প্রধান আসামী বখাটে ইয়াহিয়া সরর্দারকে সিলেট হতে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ২টায় সিলেটের জালালাবাদ মেট্রোপলিটন এলাকার মাসুক বাজার এলাকার একটি বাসা থেকে সুনামগঞ্জের জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুল্লাহ”র নেতৃত্বে ,দিরাই থানা সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন শিকদার ও সিলেটের জালালাবাদ থানা ওসি শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫০ জন পুলিশের একটি বিশেষ টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। ভোরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেফতারকৃত খুনী এহিয়াকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারকৃত এহিয়া পুলিশের কাছে মুন্নীকে সে খুন করেছে মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আত্মস্বীকৃত খুনী এহিয়া সর্দার উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন সরদারের বখাটে পুত্র।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াহিয়া আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন সুনামগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারা দেশের মধ্যে সবসময়ই ভাল। আমরা কোনমতেই এ ঐতিহ্যকে ম্লান হতে দেবনা। যখন যেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে সেখানেই পুলিশের তৎপরতা তাৎক্ষনিকভাবে শুরু হবে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মুন্নী খুনের মামলার দ্বিতীয় আসামী তানভীর আহমদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। এর আগে বখাটে খুনী প্রেমিক ইয়াহিয়া ও তার বন্ধু তানভীরকে আসামী করে দিরাই থানায় হত্যা মামলা নং ১০ তাং ১৮/১২/২০১৭ইং দায়ের করেন মুন্নীর মাতা রাহেলা বেগম। মামলা এফআইআরের পর দিরাই থানার ওসি মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে স্থানীয় কলেজ রোডস্থ বাসভবন থেকে এজাহারভূক্ত আসামী তানভীর আহমদকে আটক করে। গ্রেফতারকৃত তানভীর পৌর শহরের আনোয়ারপুর নয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম চৌধুরীর ছেলে। তানভীরদের পাশেই মুন্নী আক্তারের পরিবার বসবাস করে আসছিল।

মুন্নী উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের ইতালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের কন্যা। দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লায় নানার বাসায় মা ও ছোট ভাই মাইদুল ইসলাম মাহদী (৯) সহ বসবাস করতো সে। ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া করানোর জন্য মা রাহেলা বেগম তাদেরকে শহরে পিতার বাসায় নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনার দিন ঐ বাসার ভাড়াটে অন্য দুটি পরিবার বাসায় ছিলেননা। ফলে বাড়ীটি ছিল ফাঁকা। এই সুযোগেই বাসায় ঢুকে মুন্নীকে ছুরিকাঘাত করে বখাটে এহিয়া। মুন্নীর সহপাঠী ও শিক্ষকরা জানান,বছর খানেক আগে উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন সরদারের বখাটে পুত্র ইয়াহিয়া সর্দার মুন্নীকে উত্যেক্ত করতে শুরু করে। মুন্নীর স্বজনরা জানান,ইয়াহিয়ার যন্ত্রনায় ছয়মাস আগে থেকে ঘরে অনেকটা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় মুন্নীকে। তবু বাসার পাশে গিয়ে প্রায়ই বখাটে ইয়াহিয়া তাকে উত্যেক্ত বিরক্ত করতো। হত্যা ও তুলে নেয়ার হুমকী দিতো। থানা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় প্রায় ৩ মাস আগে র‌্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মা রাহেলা বেগম। গত ২৬ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে মা রাহেলা বেগম নিজের বাসায় সালিশও ডাকেন। সালিশে দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল,বখাটে ইয়াহিয়ার দুলাভাই তোফাজ্জল হক চৌধুরী ও রাহেলার আত্মীয় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। সালিশে মুন্নীকে আর উত্যেক্ত করবেনা বলে লিখিত মুছলেকা দেয় এহিয়া। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,ইয়াহিয়া নিজ গ্রামের কওমী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। কয়েক বছর আগে মাদ্রাসা থেকে মোবাইল চুরির দায়ে সে বহিস্কৃত হয়। এরপর গ্রামের মসজিদে ও দানবাক্সের টাকাও চুরির অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় অনুষ্ঠিত সালিশে তার বাবা ক্ষমা চান। তিনি ছেলেকে বাড়ী হতে বের করে দেন। পরে দিরাই থানা সংলগ্ন সেন মার্কেটে জেডি সুজ দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয় সে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার সময় দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লায় স্কুল ছাত্রী মুন্নীর বাসায় ঢুকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় কথিত প্রেমিক ইয়াহিয়া সর্দ্দার। তাৎক্ষনিক আহতাবস্থায় তাকে সিলেটস্থ এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে রাস্তায় মারা যায়। মুন্নী দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চলতি বছরে এস এস সি পরীক্ষার্থী বলে জানা যায় ।