ডিসেম্বরে ই-পাসপোর্ট চালু হবে: অর্থমন্ত্রী

0
557
blank
blank

ঢাকা: সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ডিসেম্বরেই বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ই-পাসপোর্ট চালু হতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। আশা করা যাচ্ছে, জার্মানির যে কোম্পানি কাজ করছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।

বৈঠকে রাজধানীর যানজট কমাতে আউটার রিং রোড নির্মাণ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

গত জুলাইয়ে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো এটি উদ্বোধন হয়নি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জুলাইতে উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। কারণ, এ কাজটা বাস্তবায়নে একটি জার্মান কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা অনেক দূর কাজ এগিয়ে নিয়েছে। আজকের (বুধবার) বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কমিটিকে জানিয়েছেন যে, এটি ডিসেম্বরের পরে যাবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এটি নিজে উদ্বোধন করবেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই জনগণ ই-পাসপোর্ট পাবেন।’

ই-পাসপোর্ট চালু করতে দুই দফা তারিখ নির্ধারণ করেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত পাসপোর্ট সেবা অব্যাহত রাখতে ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সংগ্রহের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৪১ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এমআরপি পাসপোর্টে আমরা এখন শেষের দিকে চলে এসেছি। আগামী ডিসেম্বর থেকে আমরাও এমআরপি পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টে চলে যাব। ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাসপোর্টের চাহিদা মেটাতে ২০ লাখ এমআরপি পাসপোর্ট আনা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, এরপর মনে হয় আর এমআরপি পাসপোর্ট লাগবে না।

বৈঠকে রাজধানীর যানজট নিরসন এবং ঢাকার ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যানবাহন চলাচল সহজ করতে আউটার রিং রোড নির্মাণের একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালে শেষ করা হবে।

অর্থমন্ত্রী প্রকল্পটি সম্পর্কে বলেন, জাপানের সঙ্গে পিপিপির পদ্ধতিতে ঢাকার চারপাশে আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনটি রুটে ৪৮ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ ও প্রশস্ত করার কাজ করা হবে। এতে রাজধানীর যানজট কমবে। জনগণ সহজে চলাচল করতে পারবেন।

এদিকে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। পূর্ব-পশ্চিম দিকের তুলনায় উত্তর-দক্ষিণে বর্তমানে যান চলাচল ও সড়কের সংখ্যা বিবেচনায় যানবাহনের অত্যাধিক চাপের কারণে ঢাকা যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের শাসনামলে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামলানোর জন্য ঢাকা সিটিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, প্রস্তাবিত আউটার রিং রোডের এলাইনমেন্টের কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত রুটটি হচ্ছে-হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড)-হেমায়েতপুর। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। এরমধ্যে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। অবশিষ্ট ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক উন্নয়ত করতে হবে।

সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর ও পূর্বাংশের সংযোগ স্থাপন করবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থকে মুন্সীগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে যাত্রাবাড়ী দিয়ে অসংখ্য যানবাহন ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করবে। ফলে রাজধানীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এতে সংশোধিত এসটিপিতে প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টের মধ্যে আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশ হেমায়েতপুর-কালান্দি-মদনপুর অংশ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ অংশ অতি দ্রুত নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবস্থা বিবেচনা করে আউটার রিং রোডের দক্ষিণাংশের প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) থেকে কালান্দি (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক), যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার, কালান্দি থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে মদনপুর (ঢাকা-চট্র্রগ্রাম মহাসড়ক) যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলেমিটার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে প্রবেশ না করেই দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবেন এবং ঢাকার যাত্রীদের একটা বড় অংশ আউটার রিং রোড ব্যবহার করে খুব সহজে ও কম সময়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। ফলে ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরের যানজট কমবে এবং বিদ্যমান ট্র্যাফিক লোড রিং রোডের দিকে মোড় নেবে। যাত্রীরা আউটার রিং রোড দিয়ে ইনার রিং রোড ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর যেকোনো এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিরাপদে এবং সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন।